টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, তালগাছী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ এর ইতিহাস
বস্ত্র শিল্পের স্বনির্ভরতা অর্জন এবং বস্ত্র ও পাট শিল্পের পূর্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে রূপকল্প-২০২১ এর আওতায় বিদেশী প্রযুক্তির নির্ভরতা কমিয়ে এখাতে দেশীয় প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল তৈরী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। এই অঙ্গীকার পূরনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মাধ্যমিক হতে স্নাতক পর্যন্ত সকল পর্যায়ে বস্ত্র প্রযুক্তি ও বস্ত্র বিজ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার নির্দেশনা দেন।
গার্মেন্টস খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের আলোকে দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের নিমিত্তে বস্ত্র অধিদপ্তর দেশের দশটি জেলায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ও ২০০৮ সাল হতে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণরূপে শুরু হয়।
“১০টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার তালগাছীতে ১.২৫ একর জায়গার উপর সৃজনশীল স্থাপত্য নকশায় টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট-এর চার তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট দ্বিতল একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়। শাহজাদপুর উপজেলার বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য জনসনেতা জনাব চয়ন ইসলাম ৩০মে ২০০৯ইং তারিখ এই প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে ড্রেস মেকিং ট্রেডে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মধ্য দিয়ে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, তালগাছী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ-এর শিক্ষা কার্যক্রম ২০০৬ সালে ভাড়াবাড়ীতে শুরু হয়। অত্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক টেক্সটাইল শিক্ষা এবং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ২০০৮ সালে ড্রেস মেকিং ট্রেডের সাথে ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং ট্রেড চালু করা হয় এবং মোট ৬০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে পরবর্তীতে পুনরায় উইভিং ও নিটিং ট্রেড চালু করে ৪টি ট্রেডে সর্বমোট ১৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের নিমিত্তে রাষ্ট্রের বিশাল ও সম্ভবনাময় বস্ত্রখাতকে নিরাপদ ও প্রতিযোগিতা সক্ষম করে গড়ে তোলার জন্য বস্ত্র খাতের ফ্লোর লেভেলে দক্ষ জনবল সরবরাহের লক্ষ্যে মাননীয় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় ২০১৭ সালে অত্র প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, তালগাছী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মোট চারটি (এ্যাপারেল ম্যানুফেকচারিং বেসিকস্; ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং; উইভিং এবং নিটিং) ট্রেডে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানে দুইটি শিফটে চারটি ট্রেডে মোট আসন সংখ্যা ২৪০ জন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ বর্তমানে অনুকুল জনমিতিক সুবিধাভোগ করছে (demographic window of opportunity) যা আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রতিবছর ২.২ মিলিয়ন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু শ্রম বাজারে যুক্ত হওয়া যুবশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এ জনমিতিক সুবিধাকে জনমিতিক লভ্যাংশে (demographic dividend) রূপান্তর করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের আরো একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো-বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের উপস্থিতি। মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮৫.১% অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। এই শ্রমজীবী মানুষদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তাই বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়ন করে তাদেরকে শ্রমবাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক টেক্সটাইল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানব সম্পদ তৈরীর মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে অত্র ইনস্টিটিউট দৃঢ় প্রত্যয়ী।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস